কিভাবে পছন্দের সেরা ল্যাপটপটি কিনবেন?

শাকিল একজন উঠতি ব্যবসায়ী। নিজের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তার দরকার একটি অত্যাধুনিক পিসি। যেহেতু সে একজন ব্যবসায়ী, প্রযুক্তিবিদ নয়, তাই প্রয়োজনীয় ও কার্যকর কনফিগারেশনটি বের করতে স্বাভাবিকভাবেই তার কিছুটা সমস্যা হবে। যা হোক, কম্পিউটারের মার্কেটে গিয়ে একটি দোকানে গিয়ে ঢুকল সে। দেখলো প্রায় একই ধরনের দেখতে অনেকগুলো পিসি। একজন দোকানদার বলল, ফাটাফাটি পারফর্মেন্স পাওয়া যায় থ্রীজিবি সিস্টেম মেমোরির সাথে। অন্যজন বিজ্ঞাপন দিল, পাওয়ারফুল ডিসক্রেট গ্রাফিক্স। পাশের জন জানাল নেক্সট জেনারেশন ইন্টেল কোর টু ডুয়ো প্রসেসরের মাধ্যমে অনেক ফাস্ট পারফর্মেন্স পাওয়া যায়।


বয়স্ক টাইপের একজন উপদেশ দিলেন মাল্টিটাসকিং এর উপর জোর দিতে পিসি কেনার ব্যাপারে। শাকিলের মতে বেশিরভাগ মানুষের জন্য এটা আসলেই একটি সমস্যা। কিন্তু আমার মনে হয় কম্পিউটার কেনা কিন্তু আসলে অতটা কঠিন নয়। শুধুমাত্র জানতে হবে আসলে আপনি এটা দিয়ে কি ধরনের কাজ করতে চাইছেন। কম্পিউটার দোকানীরা সাধারণত পিসি কেনেন দ্রুততম প্রসেসর দেখে এবং বিক্রিও করেন এটা বলে। কারণ এটা তুলনামূলক সহজ কাজ। এর মধ্যে অধিকাংশই নাম্বার দেয়া ছিলো (যেমন ৪৮৬ দ্রুতম ৩৮৬ এর চেয়ে)। কিন্তু এ গল্প এখন পুরনো। প্রসেসরে এখন আর এভাবে নাম্বার দেয়া হয় না এবং অন্যান্য কম্পোনেন্ট যেমন মেমোরি এবং গ্রাফিক্স কার্ড গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পিসি তৈরিকারক গেটওয়ে’র সিনিয়র ম্যানেজার গ্লেন জিস্টেড বলেন নন-টেকনোলজিস্টদের জন্য ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ প্রয়োজন অনুযায়ী খুঁজে বের করা অবশ্যই কঠিন। এটা পিসি ইন্ডাস্ট্রির জন্য আসলেই একটি বড় সমস্যা। কারণ একটি ফ্যামিলি বা সাধারণ অফিসে যে পিসি ব্যবহার করা হয় তাতে সাধারণত অনেকদিন কোন আপগ্রেড কম্পিউটার যন্ত্রাংশ লাগানো হয় না। যদি কোন পার্টস নষ্ট হয়ে যায় তবে তা ভিন্ন কথা। যতদিন কাজ চালানো যায় কেউ আর নতুন কেনে না। পিসি ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা একটি বড় সমস্যা। যা হোক ইন্ডাস্ট্রি এক্ষেত্রে সচেতন। হিউলেট প্যাকার্ড (এইচপি) ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় পিসি সনাক্ত করেছে যেমন মবিলিটি অথবা এন্টারটেইনমেন্ট। এর মাধ্যমে প্ল্যান করা হচ্ছে আগামী কয়েক মাসে খুচরা দোকান গুলোতে কি ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে। গেটওয়ে এ ধরনের কার্যক্রমই চালিয়ে যাচ্ছে। এএসডি এই মাসে দোকানদারকে হেল্প করার জন্য একটি বিশেষ লোগো তৈরি করেছে। এটা দেখে সেই পিসিটিকে সনাক্ত করা যাবে যাতে ভিডিও গেমের জন্য সঠিক কম্পোনেন্ট রয়েছে।


ডেস্কটপ অথবা ল্যাপটপ?
পিসি ক্রেতাদের প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা অ্যাপল নাকি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ভিত্তিক কম্পিউটার কিনবেন। অ্যাপল এখনও মাইনরিটি পর্যায়ে রয়েছে। তবে এই ব্র্যান্ডটি ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গ্রাফিক্স শিল্পী, ছাত্র এবং অন্যান্য যারা ইউনিক সফটওয়্যার এবং ডিজাইন পছন্দ করে। তুলনামূলকভাবে অ্যাপল পিসি পছন্দ করা সহজ। কারণ শুধুমাত্র অ্যাপলই এটা তৈরি করে। অত্যাধুনিক উইন্ডোজ মেশিনের ক্ষেত্রে রয়েছে একাধিক অপশন। অধিকাংশ ক্রেতাই যখন এক্ষেত্রে কম্পিউটারের দোকানের সামনের দিয়ে যান তখন তারা জানেন তারা কি চান। ডেস্কটপ না ল্যাপটপ? তারা এও জানেন যে কি পরিমান খরচ তারা এক্ষেত্রে করতে পারবেন। আসল কথা হলো অধিকাংশ ক্রেতা যেহেতু প্রযুক্তিবিদ নন সেহেতু তারা বাজেটের বিষয়টিই বেশি প্রাধান্য দেন। এটা বাজেট নির্ভর সিদ্ধান্ত। সাধারণত জনগণ পারফর্মেন্স বোঝে না। তাই তারা প্রাইস রেঞ্জের মাঝামাঝি কেনে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা বড় ধরনের ভুল করতে পারে। আর সেটা হচ্ছে তাদের যা লাগেনা তাও তারা কেনে। প্রসেসরের স্পিড অনেক বেশি হতে পারে আদতেই যা মূখ্য উদ্দেশ্য নয় সবার জন্য। অ্যাভারেজ পিসি ইউজারদের জন্য তাদের প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই কম্পিউটিং ক্যাপাসিটি রয়েছে। পিসি তৈরিকারকরা এখন অন্যান্য কম্পোনেন্ট এবং পিসি ডিজাইন নিয়ে আরো বেশি কাজ করছেন। যেমন ভিডিও গেমের উপর ফোকাসকৃত একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার গেটওয়ে ডিজাইন করেছিলো যা ২০০০ ডলারের পরিবর্তে ১০৯৯ ডলারে বিক্রি হয়। মূল্য হ্রাসের কারণ হচ্ছে হাই- এন্ড পিসির জন্য গেটওয়ে নেক্সট জেনারেশন ব্লু-রে ডিভিডি ড্রাইভ খুঁজে পেয়েছে এবং টপ প্রসেসরের জায়গায় অ্যাভারেজ প্রসেসর ব্যবহৃত হয়েছে। যারা গেমপ্রিয় তাদের জন্য এই পিসিটি ভাল কিছু যারা মুখি দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য অতটা সুইটেবল নয়।


শপিং চেকলিস্ট
হালকা একটু চিন্তা ভাবনা ক্রেতাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। তবে কয়েকটি জিনিস ভাবতে হবে। এক. প্রসেসরের স্পিড কেমন হবে। কারণ এর দাম এখনও অনেক বেশি। আপনার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু স্পিডের প্রসেসর যদি কেনেন, সবচেয়ে লেটেস্ট প্রসেসরের দিকে না তাকিয়ে তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় খরচ অনেক কমে আসবে। ক্যাজুয়াল ইউজাররা এখানেই ভুল করে বসে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি স্পিডের ও লেটেস্ট প্রসেসর কেনে। ফলে বাজেটও যায় বেড়ে। যারা চিপ তৈরি করছেন তারাও গত কয়েকবছর ধরে প্রসেসরের স্পিড বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করছে না। এ কঠিন প্রসেসরকে একটি চিপে যুক্ত করছেন। ডুয়েল কোর চিপের দুটি ব্রেন, ট্রি-কোর এর তিনটি। তবে ডুয়েল কোর কিন্তু একসাথে দুটো একক প্রসেসরের মতো শক্তিশালী নয়। কারণ কিছু এফিসিয়েন্সি কমে যায় যখন কম্পিউটার এক ব্রেন থেকে আরেক ব্রেনে সুইচ করবে। তবে মার্কেটিং করতে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না। যেমন ল্যাপটপের জন্য ইন্টেলের সেন্ট্রিনো ডেজিগনেশন। সেন্ট্রিনো স্টিকারযুক্ত ল্যাপটপে কয়েকটি চিপ রয়েছে। এর মধ্যে ১টি ব্যবহৃত হয় পাওয়ায় ওয়্যারলেস ইন্টারনেট অথবা ওয়াই-ফাই-এ। দুই. অন্যান্য অংশ। আলাদা কিছু গ্রাফিক্স চিপস। মাঝে মধ্যে একে বলে ‘যা গ্রাফিক্স’। এটা ইমেজগুলোকে আলাদা আলাদা ক্রাঞ্চ করে, মেন প্রসেসরে রিলে না করে পারফর্মেন্স বাড়াতে পারে। টুকরো গ্রাফিক্স ভিডিও গেমসের জন্য অবশ্যই দরকার। এটা বিভিন্ন কাজ অনেক দ্রুত করে দেয়। যেমন স্ক্রীন জুড়ে ফটো ড্রাগ করা। পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করার আরেকটি উপায় হচ্ছে র‌্যাম বৃদ্ধি করা। তিন. স্টোরেজ ডিজিটাল: মিউজিক, ফটো কিংবা ভিডিও যাই হোক না কেন বড় ধরনের হার্ডডিস্কও এর মাধ্যমে সহজে ভরাট করা সহজ। চার. সাইজ এবং স্টাইল : স্পিডি পিসির হিউজ ডেস্কটপের কোন দরকার নেই। যদিও ডেস্কটপ অনেক বেশি পাওয়ারফুল এবং কমদামী ল্যাপটপের চেয়ে। তবে ইদানীং এই দূরত্বটা কমে এসেছে। অধিকাংশ কমন ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপও এখন ভাল কাজ করে। তবে দামের তারতম্যটা থেকেই যায়। যে সমস্ত ভ্রমণকারীরা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে চান তাদের ওজন এবং ব্যাটারী লাইফ কনসিডার করা উচিত। সবচেয়ে পাতলা ল্যাপটপের ওজন ২ পাউন্ড। আর বড়গুলো ১৫ পাউন্ড বা তারও বেশির রেকর্ড ভাঙতে পারে। ল্যাপটপ ক্রেতাদের ব্যাটারী লাইফ এজন্য কনসিডার করা উচিত যাতে বড় ধরনের জার্নির মাঝপথে সমস্যায় না পড়তে হয়। সেই সাথে সঠিক ওয়্যারলেস এবিলিটিও নিশ্চিত করতে হবে। অধিকাংশ ল্যাপটপেই ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট রয়েছে। যা অনেক ডেস্কটপেই অনুপস্থিত। ওয়্যারলেস এক্সেসরিজের জন্য কিছু মিড এবং হাই এন্ড ল্যাপটপে ব্লুটুথ অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যেমন মাইক ও হেডফোন এবং যে সব স্থানে ওয়াই-ফাই এভেইলেবন সেখানকার জন্য সেলুলার ওয়্যারলেস। ভিডিও এডিটর এবং গেমারদের অবশ্যই ১৭ ইঞ্চি মনিটর কেনা উচিত। এক্সটার্নাল মনিটর ডেস্কটপের জন্য প্রয়োজন এবং ল্যাপটপের জন্য ভাল কিছু যা ২৪ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়ানো যায়। এখনও যদি কম্পিউটার কিনতে গিয়ে কোন দ্বিধা থাকে তবে নিজেকে প্রশ্ন করেন, আপনি আপনার কম্পিউটার গিয়ে মূলত: কোন কাজটি করতে চান? যদি তাও না বোঝেন তবে তো বাজেটের দিকে তাকাতে হবে। যদিও কিছু ব্র্যান্ডের পিসির দাম কম পরিচিত কোম্পানির চাইতে তবুও এটা মনে রাখা উচিত যে মার্কেট খুবই প্রতিযোগিতা-মূলক। দামের পার্থক্য খুবই কম। তাই একটু দাম দিয়ে হলেও ভাল ব্র্র্যান্ডের পিসি কেনা উচিত। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অফারও এক্ষেত্রে খেয়াল করা উচিত সচেতনভাবে।

Copyright © 2009 - www.techzoom7.tk - is proudly powered by Blogger
Smashing Magazine - Design Disease - Blog and Web - Dilectio Blogger Template