টাকা নিয়ে সবার আক্ষেপ, যদি আরো থাকত তাহলে আরেকটু ভালোভাবে চলা যেত। কিন্তু ঠিক কত টাকা হলে কেমন চলা যেত, তা নিয়ে পুরোপুরি ধারণা হয়তো কারো নেই। তা না হলে বিশ্বের সেরা ধনীদের মধ্যে থেকেও কেন কেউ কেউ লোকাল বাসে চড়েন, আবার কেউ এক জোড়ার বেশি দুই জোড়া জুতা কেনেন না! আরো শুনুন_ রাসনা শারমিন মিথি
ওয়ারেন বাফেট
একালের গৌরী সেন
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের খাতায় তৃতীয় স্থানে থাকা ওয়ারেন বাফেটের বাড়িটি দেখলে ভাববেন, এ বুঝি সাধারণ কোনো চাকরিজীবীর বাড়ি। ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ৫০ বছর আগে ৩১ হাজার ৫০০ ডলারে কেনা বাড়িটি পাল্টাননি এখনো। বিলাসিতার ধারেকাছেও নেই তিনি। শৌখিন ধনকুবেরদের মতো নিজের কোনো ইয়ট নেই বাফেটের। এখন পর্যন্ত নাকি ভালো কোনো রেস্টুরেন্টেও খাননি। বিশ্বের অনেক দেশে যেতে হয় যখন-তখন। কিন্তু সেখানেও একই নিয়ম। দামি রেস্টুরেন্ট পছন্দ নয় বাফেটের। মজার ব্যাপার, বার্গার বা মুরগি ছাড়া অন্য কিছু খুব একটা খান না এই বিলিয়নেয়ার।
জনহিতৈষী বাফেট তাঁর সম্পদের ৮৫ শতাংশই পর্যায়ক্রমে দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও তিনি। বললেন, 'প্রয়োজন ছাড়া শুধু বিলাসিতার জন্য কেনা বস্তু আমার কাছে খেলনা মনে হয়। এসব বাড়তি ঝামেলা লাগে।'
একেবারে অল্প বয়স থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চুইংগাম, পানীয় ও সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন বাফেট। কলেজে পড়ার সময় তাঁর দাদার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন। সে বয়স থেকেই স্টক মার্কেটের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় তার। কলেজ পাস করার সময় নিজের ঝুলিতে জমা হয় ৯০ হাজার পাউন্ড। তারপর তিন অংশীদারের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করলেও পরে একাই ব্যবসা শুরু করেন। একে একে বিনিয়োগ করতে থাকেন বড় বড় কম্পানিতে। ১৯৮৮ সালে বাফেটের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেয় বিশ্বখ্যাত কোকা-কোলা কম্পানির ৭ শতাংশ শেয়ার।
নামে স্লিম, কাজেও
মেক্সিকোর ধনকুবের কার্লোস স্লিম এখন বিশ্বের এক নম্বর ধনী। একাধারে প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী ও জনহিতৈষী হিসেবে তাঁর নাম এখন তুঙ্গে। টেলমেক্স, টেলসেল ও আমেরিকা মোবিলের মালিক তিনি। মেক্সিকোর স্টক একচেঞ্জের ভাইস চেয়ারম্যানও। মোট সম্পদ ৫৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ধনী হওয়ার আগে পাত্তাই ছিল না কার্লোসের। কেননা তাঁর লাইফস্টাইল ছিল একেবারে আটপৌরে, মধ্যবিত্তের মতো। ২৬ বছর বয়সে জমা করেছিলেন চার কোটি ডলার। তবে বিলাসিতা ছিল না। অন্যদের মতো নিজের কোনো ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ নেই তাঁর। ৪০ বছর ধরে আছেন পুরনো বাড়িতেই।
মিতব্যয়ী কাম্প্রাড
ফোর্বস ম্যাগাজিনের জরিপে সুইডিশ ব্যবসায়ী ইঙ্গভার কাম্প্রাড এখন বিশ্বের একাদশ ধনী। কিন্তু তাতে কি! ব্যবসার প্রয়োজনেও কখনো দামি গাড়িতে চড়েননি। থাকেননি কোনো দামি হোটেলেও। ব্যবসার কাজে কোথাও যাওয়ার দরকার হলে যেতেন লোকাল বাসে। কদাচিৎ চালাতেন নিজের ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি। উড়োজাহাজে উঠলে ইকোনমি ক্লাস। আর খাবারটাও যে সাধারণ হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ব্যবসায় কাম্প্রাডের হাতেখড়ি হয় খুব অল্প বয়সে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাইসাইকেল চালিয়ে দেশলাই বিক্রি করতেন। এতে ভালোই লাভ হতো। এভাবে অল্প অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু হয় পথচলা। এরপর শুরু করেন মাছ, পেনসিল, বলপয়েন্ট কলম, ক্রিসমাস গাছ সাজানোর উপকরণ বিক্রি। ১৭ বছর বয়সে বাবা তাঁকে কিছু নগদ টাকা ধরিয়ে দিলে আরো এগিয়ে যেতে থাকেন। সেই টাকার সঙ্গে নিজের জমানো টাকা মিলিয়ে শুরু করেন ফার্নিচার কম্পানি আইকিয়ার পথচলা। অপচয় রোধ করতে কম্পানির সব কর্মচারীকে উৎসাহিত করতেন কাগজের উভয় পাশে লেখার জন্য।
ফিনি
এক জোড়া জুতা
ডিউটি ফ্রি শপারস গ্রুপের প্রতিষ্ঠা করে আইরিশ আমেরিকান শিল্পপতি ফিনি কোটিপতি হয়েছেন বড় দ্রুত। কিন্তু এতেও তাঁর চলাফেরায় আসেনি পরিবর্তন। সব সময় বলেন, 'একটি কথা সব সময় আমার মনে গেঁথে থাকবে, তা হচ্ছে_তোমাদের উচিত দরিদ্রদের জন্য সম্পদ ব্যবহার করা। আমিও চেষ্টা করি সাধারণ জীবন যাপনের। আমি
ওভাবেই বড় হয়েছি। বেশি কাজ করাই আমার লক্ষ্য; ধনী হওয়া নয়।'
অঢেল টাকা খরচ করেন জনসেবায়। বিভিন্ন স্কুল গবেষণাগার ও হাসপাতালে দিয়ে যাচ্ছেন হাত খুলে। তবে নিজে এখনো পাবলিক বাসে চলছেন। পোশাক কেনেন সাধারণ শপিং মল থেকে। জুতা কেনেন না এক জোড়ার বেশি। তাঁর মতে, এক জোড়া জুতায়ই তো চলে যায় বেশ, আবার আরেকটা কিনে অপচয় করার কী দরকার? এভাবেই গড়ে তুলছেন সন্তানদেরও। তাঁর ছেলেমেয়েরা গ্রীষ্মের ছুটিতে কাজ করে সারা বছরের খরচটা নিজেরাই তুলে আনে।
ফ্রেডারিক মেইজার
পয়সা নষ্ট নয়
ব্যাংকে জমা আছে ৫০০ কোটি ডলার। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তাঁর আছে বড় ১৩টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ২০০৯ সালে যখন সব ধনীর একে একে পতন হয়েছিল, তখন শুধু মেইজারেরই অবস্থান ছিল অটল। বাফেটের মতোই তিনিও বেশ মিতব্যয়ী। একটি গাড়ি কিনলে তা নষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন গাড়ি কেনেন না।
এ নিয়ে পর পর তিনবার বিলিয়নেয়ারের খাতায় নাম এসেছে তাঁর। কিন্তু যে বাড়িতে থাকেন, তার বাজারদর মোটে তিন লাখ ডলার। দামি কোনো ব্র্যান্ডের পোশাকও পরতে দেখা যায় না। কারণ ধনী কি না তা বোঝানোর জন্য পয়সা নষ্ট করতে নারাজ মেইজার।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন